• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

বিটরুট চাষে লাভবান নীলফামারীর আবু সুফি

  • ''
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২৪

নীলফামারী প্রতিনিধি:

বিটরুট চাষে লাভবান হয়েছেন নীলফামারীর তরুণ উদ্যোক্তা আবু সুফি আহমেদ। জেলায় এই প্রথম চাষ করেছেন থাইল্যান্ডের উচ্চ ফলনশীল সবজি বিটরুট। সে সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুরের ছেলে।

তিনি এবার ৫১ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন বিদেশি উচ্চ ফলনশীল পুষ্টিগুন সম্পন্ন সবজি বিটরুট। তেমন যত ছাড়াই ভালো ফলন হয়েছে। এর চাহিদা থাকায় আগামীতে আরও বেশি জমিতে বিটরুটের আবাদ করবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, আমার পাশের জমিতে আবু সুফি বিটরুট চাষ করেছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে। এটা নাকি অনেক লাভজনক সবজী। তিনি প্রথমবারেই সফল হয়েছেন। তার দেখে আমিও আগামী বছর চাষ করবো।

ওই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিটরুট সম্পর্কে আগে কিছুই জানতাম না। প্রথমে ভাবছিলাম এটা মুলা বা গাজর জাতীয় ফসল হবে। পরে দেখি অনেক সুন্দর লাল একটি ফল। এটির রং দেখতে প্রায় ড্রাগন ফলের মতো। খেতে অনেক সুস্বাদু, শুনছি অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধি ও ভিটামিন আছে। বাজারে দামও বেশি, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীতে আমিও চাষ করবো।

এই তরুণ উদ্ধোগতা বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করেছি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু আমার পছন্দ কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে চাষ করেছি থাইল্যান্ডের উচ্চ ফলনশীল সবজি বিটরুট। ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডের বিটরুটের বীজ সংগ্রহ করে গত ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করেছি। ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন লাগে,তাই ফসল সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করছি। একটি বিটরুট দেড় থেকে দুই কেজি ওজন হয়েছে। এটি হলো সুপারফুড জাতীয় একটি সবজি। এটা ঔষধি গুন সম্পূর্ণ।’

‘নিজশ্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত গুঁড়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি, সবজি হিসেবে স্থানীয় বাজারে বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সবজিটির পুষ্টিগুণ অনেক বেশী, ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে আছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবেও এটি খুবই কার্যকর।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বীজ, সার, সেচ, লেবার ও হাল এসব মিলিয়ে ৫১ শতাংশ জমিতে খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। আমি আশা করছি, প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মতো বিটরুট বিক্রি করতে পারবো। ৫৫ হাজার টাকা খরচ বাদে আমার প্রায় দুই লক্ষাধীক টাকা লাভ হবে। আমি বিটরুট চাষ করে সফল হয়েছি।

মাটির প্রকৃতি ও গুনাগুন অনুযায়ী বেলে, দো-আঁশ মাটিতে চাষ করলে সার কম লাগে। এ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় খরচ অনেকটাই কম। বীজ রোপনের চার মাসের মাথায় ক্ষেত থেকে বিটরুট উঠানো শুরু করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন ধরণের অর্গানিক প্রোডাক্ট নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করেছি। সেই সুবাধে আমার অর্গানিক প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা। স্থানীয়ভাবে নীলফামারীতে তৈরি করেছি ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) নামে একটি কোম্পানি। বিটরুটের মধ্যে এন্টি-এজিং উপাদান রয়েছে, যেটা সৌন্দর্য্যকে ধরে রাখে। আমার কোম্পানির মাধ্যমে কাঁচা এবং পাউডার করেও বিক্রি করতেছি।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো, আতিক আহমেদ জানান, ‘সবজিটির পুষ্টিগুণ অনেক বেশী, ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে আছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবেও এটি খুবই কার্যকর। নীলফামারীতে এই প্রথম চাষ শুরু করেছেন আবু সুফি। তবে তার দেখাদেখি অনেকেই বিটরুট চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নীলফামারীতে এই প্রথম বিটরুট চাষ করেছেন আবু সুফি আহমেদ। সুপারফুড হিসেবে পরিচিতি বিটরুট বিদেশি সবজি। এটি অত্যান্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।’

‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি ব্যাপকভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া বিটরুট  চাষে উপযোগি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads